ভাষাবিদগণের মতানুসারে বাংলা টাকা শব্দটি সংস্কৃত "টঙ্ক" শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়েছে যার অর্থ রৌপ্যমুদ্রা। বঙ্গ রাজ্যে সবসময় টাকা শব্দটি যেকোনো মুদ্রা বা ধাতব মুদ্রাকে বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। ১৪ শতাব্দীতে ইবন বতুতা লক্ষ্য করেছিলেন যে বাংলা সালতানাতের লোকজন, সোনা এবং রূপার ধাতবকে দিনার না বলে "টাকা" বলতো।
১৯৪৭ হইতে ১৯৭১
১৯৪৭ সালের বঙ্গভঙ্গের পর, পূর্ব বাংলায় (পাকিস্তান অধিরাজ্যের অংশ) এবং ১৯৫৬ সালে পূর্ব বাংলার পুনঃনামকরণ করা হল পূর্ব পাকিস্তান; যেখানে পাকিস্তানি রুপিতেও "টাকা" শব্দটি মুদ্রিত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে মুদ্রা হিসেবে এই ভূখণ্ডে পাকিস্তানি রুপি প্রচলিত ছিল। ৪ঠা মার্চ ১৯৭২ সালে সরকারী মুদ্রা হিসেবে- "টাকা" -কে ঘোষণা করা হয়। সর্বত্র এর প্রচলন না হওয়া পর্যন্ত স্বাধীনতার বেশ কয়েক মাস পরেও পাকিস্তানি রুপির ব্যবহার ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের দ্বারা একটি বেসরকারী রীতি প্রচলিত ছিলঃ পাকিস্তানি রুপির নোটগুলিতে বাংলাতে "বাংলা দেশ" এবং ইংরেজিতে "Bangladesh" রবার স্ট্যাম্প দিয়ে মুদ্রাঙ্কন করা। ৮ জুন ১৯৭১-এ পাকিস্তানি সরকার সমস্ত রবার স্ট্যাম্প-সহ নোটগুলিকে বেআইনি, অবৈধ এবং মূল্যহীন ঘোষণা করে।
১৯৭২ হতে বর্তমান
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ সরকার সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের মুদ্রার নাম টাকা রাখে। পরবর্তীতে টাকার সংকেত ৳ নির্ধারণ করা হয়।
প্রথম কোষাগার নোট ১৯৭২ সালে ৳১-র ছিল, যেটি ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত প্রচলিত ছিল।
এক টাকার শতাংশকে পয়সা নামে অভিহিত করা হয়। অর্থাৎ ৳১ সমান ১০০পয়সা।
৳২ কোষাগার নোট ১৯৮৯ সালে ঘোষণা করা হয়।
১৯৭২ সালে টাকার প্রথম নোটগুলিঃ ৳৫, ৳১০ ও ৳১০০ মূল্যে ঘোষণা করা হয়।
১৯৭৫ সালে প্রথম ৳৫০ নোট ঘোষণা, ১৯৭৭ সালে প্রথম ৳৫০০ নোট এবং ১৯৮০ সালে প্রথম ৳২০ নোট ঘোষণা হয়।
৳১০০০ মূল্যমানের নোট ২০০৮ সালে প্রথম ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশে ৳১, ৳২, ৳৫, ৳২০, ৳৫০, ৳১০০, ৳৫০০ এবং ৳১০০০ মুল্যমানের কাগুজে নোট প্রচলিত রয়েছে। এছাড়াও ১ পয়সা, ৫ পয়সা, ১০ পয়সা, ২৫ পয়সা, ৫০ পয়সা, ৳১, ৳২ এবং ৳৫ মূল্যমানের ধাতব মুদ্রা প্রচলিত রয়েছে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের পক্ষে কাগুজে নোট প্রচলন এবং নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বপ্রাপ্ত। এছাড়াও ১ পয়সা, ৫ পয়সা, ১০ পয়সা, ২৫ পয়সা ও ৫০ পয়সা বর্তমানে অচল।
0 Comments